আমাদের চারপাশে নানা রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যাচ্ছে। এই সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়া কখনো শক্তি উৎপন্ন করে, কখনো ব্যবহার উপযোগী নতুন পদার্থ তৈরি করে আবার কখনো বা রোগ নিরাময়েও সাহায্য করে।
এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারব;
• রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের শক্তির রূপান্তর ব্যাখ্যা করতে পারব,
• শুষ্ক কোষের শক্তির রূপান্তর ব্যাখ্যা করতে পারব;
• তড়িৎ বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা করতে পারব;
• পরীক্ষণ কাজে রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারব;
• আমাদের জীবনে রাসায়নিক বিক্রিয়ার অবদান উপলব্ধি করতে পারব।
লিমা পরীক্ষাগারে কিছু রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে শুষ্ক কোষে তড়িৎ বর্তনী তৈরি করল ।
সপ্তম শ্রেণিতে তোমরা প্রতীক ও সংকেত সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছ। রসায়নবিদগণ গঠন অনুসারে পৃথিবীর সকল পদার্থকে মৌলিক ও যৌগিক এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এ পর্যন্ত মোট ১১৮ টি মৌলিক পদার্থের কথা জানা গেছে। সাধারণত মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিন নামের একটি বা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করা হয়। মৌলের পুরো নামের এ সংক্ষিপ্তরূপকে প্রতীক বলা হয়। যেমন— H (হাইড্রোজেন), O (অক্সিজেন), Ca (ক্যালসিয়াম) ইত্যাদি।
আবার কোনো মৌল বা যৌগের অণুর সংক্ষিপ্তরূপকে সংকেত বলা হয়। যেমন- হাইড্রোজেন অণুর সংকেত H2, অক্সিজেন অণুর সংকেত O2, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড অণুর সংকেত HCl ইত্যাদি।
যৌগের সংকেত লেখার সময় আমাদেরকে মৌলের যোজনী সংখ্যা সম্পর্কে ভাবতে হবে। মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে। মৌলিক পদার্থের যোজনীকে আমরা এক একটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের একটি হাত তার যোজনী হবে ১। হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়ই একহাত বিশিষ্ট মৌল। অর্থাৎ উভয়ের যোজনী ১। তাই হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংকেত হবে HC1। অক্সিজেনের যোজনী ২ অর্থাৎ অক্সিজেনের ১টি পরমাণুর ২টি হাত আছে। এ ২টি হাত দিয়ে অক্সিজেন একযোজী বা ১ হাত বিশিষ্ট ২টি হাইড্রোজেনের পরমাণুকে ধরতে পারে। এ কারণে পানির সংকেত H2O ।
নাইট্রোজেন ও কার্বনের যোজনী যথাক্রমে ৩ এবং ৪। ফলে অ্যামোনিয়ার সংকেত NH3 এবং মিথেনের সংকেত CH। হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, পানি, অ্যামোনিয়া ও মিথেনের অণুকে নিম্নরূপভাবে দেখানো যেতে পারে—
উল্লেখ্য কোনো কোনো মৌলের একাধিক যোজনীও থাকতে পারে। যেমন- সালফার এর যোজনী ২ ও ৪, আয়রন এর যোজনী ২ ও ৩ ইত্যাদি।
অতএব কোনো মৌলের যোজনী হলো ঐ মৌলের একটি পরমাণু কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে যুক্ত হয় তার সংখ্যা। কোনো যৌগ গঠনের সময় সাধারণভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন মৌলের সবগুলো হাত বা যোজনী কাজে লাগে।
কয়েকটি মৌল ও যৌগমূলকের যোজনী
যোজনী - ১ | যোজনী – ২ | যোজনী – ৩ | যোজনী – ৪ | |
---|---|---|---|---|
অধাতু (মৌল) | হাইড্রোজেন (H) ফ্লোরিন (F) ক্লোরিন (CI) ব্রোমিন (Br) আয়োডিন (1) | অক্সিজেন (O) সালফার (S) কার্বন (C)
| নাইট্রোজেন (N) ফসফরাস (P)
| কার্বন (C) সালফার (S)
|
ধাতু (মৌল) | সোডিয়াম (Na) পটাশিয়াম (K) কপার (Cu) (আস) সিলভার (Ag) গোল্ড (Au) (আস)
| ম্যাগনেসিয়াম (Mg) ক্যালসিয়াম (Ca) আয়রন (Fe) (আস) কপার (Cu) (ইক) জিঙ্ক (Zn) টিন (Sn) (আস) লেড (Pb) (আস) | অ্যালুমিনিয়াম (Al) আয়রন (Fe) (ইক) গোল্ড (Au) (ইক)
| টিন (Sn) (ইক) লেড (Pb) (ইক)
|
যৌগমূলক | অ্যামোনিয়াম () হাইড্রোক্সিল () নাইট্রাইট () নাইট্রেট () হাইড্রোজেন কার্বনেট () | কার্বনেট () সালফাইট () সালফেট ()
| ফসফেট ()
|
ছকে উল্লেখিত , , , ইত্যাদি পরমাণুগুচ্ছ স্বাধীনভাবে থাকে না। মৌলিক পদার্থের পরমাণুর মতো যৌগ গঠনে অংশ নেয়। এ জাতীয় পরমাণুগুচ্ছকে যৌগমূলক বা র্যাডিকেল বলে । যৌগের আণবিক সংকেত লেখার ক্ষেত্রে যে সকল নিয়ম অনুসরণ করা হয় তা নিম্নরূপ :
(১) যৌগে উভয় মৌল বা যৌগমূলকের যোজনী একই হলে এক্ষেত্রে সংকেতে যোজনী লেখার প্রয়োজন হয় না। শুধু মৌল কিংবা মূলকগুলো পাশাপাশি লিখলেই চলে। যেমন : CaO (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড), , (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) ইত্যাদি।
(২) উভয় মৌলের কিংবা উভয় মূলকের যোজনী কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যার গুণিতক হলে ঐ সংখ্যা দিয়ে যোজনীকে ভাগ করে বিনিময় করে লিখতে হয়। যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড এর ক্ষেত্রে এখানে কার্বন ও অক্সিজেনের যোজনী যথাক্রমে 4 এবং 2 ।
(৩) উভয় মৌলের কিংবা উভয় মূলকের যোজনী ভিন্ন এবং গুণিতক না হলে, অর্থাৎ A মৌলের যোজনী x এবং B মৌলের যোজনী y হলে A ও B মৌল দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেতটি হবে AyBx। A মৌলের যোজনী সংখ্যা B মৌলের ডানপাশে সামান্য নিচে ছোট করে এবং B মৌলের যোজনী সংখ্যা A মৌলের ডানপাশে নিচের দিকে ছোট করে লিখতে হয়। যেমন- অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ()
যেকোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার বিবরণ দিতে হলে আমাদের রাসায়নিক সমীকরণ সম্বন্ধে ধারণা থাকা অপরিহার্য। একটি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুইটি অংশে ভাগ করা যায়। এক অংশে বিক্রিয়ক পদার্থ এবং অন্য অংশে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নতুন পদার্থ থাকে। যেমন-
বিক্রিয়ক পদার্থ হলো রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনের পূর্বাবস্থা এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থ হলো রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনের শেষ বা পরবর্তী অবস্থা। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোনো পরমাণু ধ্বংস বা নতুন করে সৃষ্টি হয় না, পরমাণুর শুধু পুনর্বিন্যাস ঘটে। অতএব বিক্রিয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিক্রিয়ক পদার্থে যতগুলো পরমাণু থাকে বিক্রিয়ার পরে বিভিন্ন বিক্রিয়াজাত পদার্থেও ততগুলো পরমাণু থাকে। ফলে বিক্রিয়ক দ্রব্য এবং উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে পরমাণু সংখ্যার সমতা বিরাজ করে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়কদ্রব্য এবং উৎপন্ন দ্রব্যকে প্রতীক, সংকেত ও কতগুলো চিহ্নের ( +, → বা =) সাহায্যে সংক্ষেপে প্রকাশ করা কে রাসায়নিক সমীকরণ বলে। যেমন :
রাসায়নিক সমীকরণ লেখার নিয়মগুলো নিম্নরূপ-
(১) রাসায়নিক সমীকরণে বিক্রিয়ক পদার্থ বা পদার্থগুলোর স্ব স্ব প্রতীক বা সংকেত সমীকরণটির তীর চিহ্নের (—) বামদিকে লিখতে হয়। বিক্রিয়াজাত পদার্থ বা পদার্থগুলোর স্ব স্ব প্রতীক বা সংকেত সমীকরণটির তীর চিহ্নের (—) ডান দিকে লিখতে হয়।
(২) বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থ একাধিক হলে তাদের সংকেতের মধ্যে যোগ চিহ্ন (+) দেওয়া হয়।
(৩) কোনো পদার্থের অণুর সংখ্যা একাধিক হলে অণুর সংকেতের আগে সেই সংখ্যা লেখা হয়।
(৪) বিক্রিয়ক এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলোর মধ্যে তীর চিহ্নের পরিবর্তে সমান চিহ্ন ও (=) বসানো যায়। তবে এক্ষেত্রে উভয়পক্ষের পরমাণুর সমতাকরণ প্রয়োজন।
(৫) বিক্রিয়ার আগে বিভিন্ন পদার্থের অণুর মধ্যে যত সংখ্যক বিভিন্ন মৌলের পরমাণু থাকে, বিক্রিয়ার পরে গঠিত নতুন অণুগুলোর মধ্যে ঠিক তত সংখ্যক বিভিন্ন মৌলের পরমাণু থাকতে হবে। তাই সমীকরণের উভয় পক্ষে মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমতা আনার জন্য প্রতীক ও সংকেতগুলোকে প্রয়োজনীয় সংখ্যা দ্বারা গুণ করতে হয়।
রাসায়নিক সমীকরণের সমতাকরণ
হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। সুতরাং সমতা চিহ্নের বামদিকে বসবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন অণুর সংকেত এবং ডানদিকে বসবে বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন পদার্থ পানির অণুর সংকেত। সুতরাং বিক্রিয়াটিকে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়-
কিন্তু বিক্রিয়ার আগে যত সংখ্যক H পরমাণু এবং O পরমাণু থাকে বিক্রিয়ার পরেও বিক্রিয়াজাত পদার্থে তত সংখ্যক H এবং O পরমাণু থাকা উচিত। তাই বিক্রিয়ার সমতা স্থাপনের জন্য অণু, অণু ও অণুর সংখ্যা এবং সমীকরণ হবে নিম্নরূপ-
এই সমীকরণ থেকে বিক্রিয়ার পূর্বে এবং বিক্রিয়ার পরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মোট পরমাণুর সংখ্যা গণনা করা যায়। বোঝার সুবিধার্থে উপরের সমীকরণটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হলো-
সুতরাং উপরের সমীকরণে বিক্রিয়ার আগের পরমাণুর সংখ্যা এবং বিক্রিয়ার পরের পরমাণুর সংখ্যা সমান।
কাজ : সংযোজন বিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা প্রয়োজনীয় উপকরণ : টেস্টটিউব, মর্টার, স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার, লোহার গুঁড়া, সালফার, নিক্তি পদ্ধতি : টেস্টটিউবটি ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নাও। ৭ গ্রাম লোহার গুঁড়া ও ৪ গ্রাম সালফার (সমানুপাতিক হারে ভিন্ন পরিমাণও নেওয়া যায়) নিক্তি দিয়ে মেপে মর্টারে নাও ও খুব ভালোভাবে পিষে নাও এবং তারপর শুকনা টেস্টটিউবে ঢেলে দাও। এবার স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার দিয়ে টেস্টটিউবের তলায় তাপ দিতে থাক। তাপ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখ যেন আগুনের শিখা ছোট হয়। তাপ দিতে দিতে টেস্টটিউবের মিশ্রণটি যখন রক্তিমাভার মতো হবে তখন তাপ দেওয়া বন্ধ করো। টেস্টটিউবটি মর্টারের উপরে ধরে রাখ যেন এটি ভেঙ্গে গেলেও টেস্টটিউবের ভিতরের বস্তু নষ্ট না হয়ে যায়। অতঃপর টেস্টটিউবটি ঠাণ্ডা করো ও ভেঙ্গে ভিতরের বস্তুটিকে আলাদা করো। |
টেস্টটিউব থেকে যে বস্তুটি পেলে তা দেখতে গাঢ় ধূসর বর্ণের। তোমরা এতে হালকা হলুদ রঙের সালফার বা লোহার (আয়রন) গুঁড়া কোনোটিই দেখতে পাচ্ছ না, কারণ এখানে আয়রন ও সালফার একে অপরের সাথে মিলে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থ ফেরাস সালফাইড তৈরি করেছে।
এ ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন যেখানে একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী নতুন একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। একইভাবে জিংক ও সালফারের বিক্রিয়ায় জিংক সালফাইড তৈরির বিক্রিয়াও সংযোজন বিক্রিয়া।
এখানে উল্লিখিত দুটি বিক্রিয়াকেই মৌল থেকে যৌগ তৈরির সংযোজন বিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। তবে দুটি যৌগ যুক্ত হয়েও কিন্তু সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন আরেকটি যৌগ তৈরি হতে পারে। যেমন- অ্যামোনিয়ার সাথে হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সংযোজনে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়।
কাজ : সালফার ও অক্সিজেনের দহন বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : একটি লম্বা হাতলযুক্ত দহন চামচ, কিছু সালফার, স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার পদ্ধতি : তোমরা দহন চামচে কিছু সালফার নাও। স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার দিয়ে চামচটিতে তাপ দিতে থাক। কী দেখতে পাচ্ছ? |
প্রথমে সালফার গলে গেল তারপর নীল আগুনের শিখা দেখতে পাচ্ছ এবং ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়েছ। কারণ তাপ দেওয়ার ফলে সালফার বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্যে দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি করেছে যার জন্য তোমরা ঝাঁঝালো গন্ধ পেয়েছ।
কাজ : ম্যাগনেসিয়াম ও অক্সিজেনের দহন বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : ম্যাগনেসিয়াম রিবন, চিমটা আংটা, লাইটার, স্পিরিট ল্যাম্প/ বুনসেন বার্নার পদ্ধতি : ম্যাগনেসিয়াম রিবনের একটি ছোট টুকরার (৮ সেন্টিমিটার) একমাথা চিমটা দিয়ে ধরো। চোখে নিরাপত্তা চশমা পরে নাও। রিবনের অন্য মাথাটি বুনসেন বার্নারের শিখার উপর ধরো। লাইটার দিয়েও এটি করা যায়। খুব ভালোভাবে লক্ষ করো কী ঘটছে? |
রিবনে আগুন ধরে গেল এবং অত্যন্ত প্রজ্বলিত শিখাসহ জ্বলতে লাগল। এর কারণ হলো ম্যাগনেসিয়াম বাতাসের অক্সিজেনে দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুড়তে থাকে আর তোমরা প্রজ্বলিত শিখা দেখতে পাও। এভাবে যখন সমস্ত ম্যাগনেসিয়াম পুড়ে শেষ হয়ে যায়, তখন আপনা আপনি শিখা নিভে যায়। শেষে তোমরা ছাই এর মতো কিছু দেখতে পাচ্ছ কি? এটি আসলে ম্যাগনেসিয়াম ও অক্সিজেন পুড়ে তৈরি হওয়া ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড।
কাজ : মোমের দহন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা প্রয়োজনীয় উপকরণ : মোমবাতি, দিয়াশলাই পদ্ধতি : দিয়াশলাই দিয়ে মোমবাতি জ্বালাও। খুব ভালোভাবে খেয়াল কর কী ঘটছে? সময়ের সাথে সাথে মোমবাতির আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে। বলতো এর কারণ কী? মোমবাতি জ্বালানোর ফলে উৎপন্ন তাপে মোম গলে যাচ্ছে। এই গলিত মোমের ছোট একটি অংশ ঠান্ডা হয়ে মোমের গা বেয়ে নিচে পড়ছে কিন্তু বেশিরভাগ অংশই সলতের মধ্য দিয়ে উপরে উঠে উৎপন্ন তাপে বাষ্পীভূত হচ্ছে। এই বাষ্পীভূত মোম দহন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করছে। এর ফলে তাপ ও আলোকশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে। |
কাজ : লোহা ও তুঁতের বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : লোহার গুঁড়া, তুঁতে, পানি, টেস্টটিউব পদ্ধতি : টেস্টটিউবের চার ভাগের এক ভাগ পানি নাও। কিছু তুঁতে যোগ করে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে তুঁতের দ্রবণ তৈরি করো। এবার তুঁতের নীল দ্রবণে কিছু লোহার গুঁড়া যোগ করে ভালোভাবে ঝাঁকাও। কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ কি? দ্রবণের নীল রং আস্তে আস্তে হালকা সবুজ হয়ে যাচ্ছে আর তামার ছোট ছোট কণা টেস্টটিউবের তলায় জমতে শুরু করেছে। নীল দ্রবণ কেন হালকা সবুজ হলো? |
এখানে লোহার গুঁড়া (আয়রন) ও কপার সালফেটের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়েছে। ফলে ফেরাস সালফেট ও কপার তৈরি হয়েছে। উৎপন্ন ফেরাস সালফেটের রং হালকা সবুজ বলেই দ্রবণের রং নীল থেকে হালকা সবুজ হলো।
এখানে লোহা, কপার সালফেট থেকে কপারকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে ফেরাস সালফেট তৈরি করেছে। এ সকল বিক্রিয়া যেখানে একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে সরিয়ে নিজে ঐ স্থান দখল করে নতুন যৌগ তৈরি করে তাকে প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া বলে।
তোমরা এখন তুঁতের দ্রবণে জিংক বা দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি যোগ করে দেখ কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে।
বিযোজন বিক্রিয়া (Decomposition reaction)
কাজ : চুনা পাথরের বিযোজন বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুনা পাথর, পেচুলা বা চামচ, টেস্টটিউব, নির্গমন নল, বুনসেন বার্নার বা স্পিরিট ল্যাম্প, ক্ল্যাম্প, স্ট্যান্ড, কর্ক ও হাতমোজা পদ্ধতি : হাতমোজা পরে স্পেচুলা বা চামচ দিয়ে প্রায় ৫ গ্রাম চুনাপাথর টেস্টটিউবে নাও। এবার স্পিরিট ল্যাম্প বা বুনসেন বার্নার দিয়ে তাপ দিতে থাক। খুব ভালোভাবে খেয়াল করো কী ঘটছে। |
কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে টেস্টটিউবে নেওয়া চুনাপাথর ভাপ দেওয়ার ফলে বিযোজিত হয়ে বা ভেঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও ক্যালসিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে।
গ্যাসটি কার্বন ডাইঅক্সাইড কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে পার। অপর একটি টেস্টটিউবে ১-২ মিলিলিটার স্বচ্ছ চুনের পানি নিয়ে একটি নির্গমন নল প্রথম টেস্টটিউবের সাথে লাগাও। দেখবে চুনের পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্বিতীয় টেস্টটিউবে (নির্গমন নলের মাধ্যমে) যাওয়ার ফলে সেখানে চুনের পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড বিক্রিয়া করে আবার ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি হওয়ায় চুনের পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।
নিয়ে বিযোজন বিক্রিয়ার পারও কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো।
কপার কার্বোনেটকে ভাগ দিলে তা ভেঙ্গে কপার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅন্নাইড উৎপন্ন হয়।
পক্ষান্তরে পটাশিয়াম ক্লোরেটকে ভাপ দিলে এটি বিযোজিত হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড ও অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
এ সকল বিক্রিয়ার মতো যে সকল বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙ্গে একাধিক মৌল বা যৌগ উৎপন্ন হয় তাদেরকে বিযোজন বিক্রিয়া বলে।
তোমরা মোম জ্বালালে কী ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় তা জেনেছ। এবার বলতো এখানে কোনো ধরনের শক্তির রূপান্তর ঘটছে কি? জ্বলন্ত মোমের কাছাকাছি হাত নিলে হাতে গরম লাগে। আবার অন্ধকারে মোম জ্বালালে আমরা এর আশেপাশে দেখতে পাই। তাহলে একথা বলা যায় যে, মোম জ্বালানোর ফলে ভাপাতি উৎপন্ন হয় বলেই হাতে গরম লাগে আর আলোক শক্তি উৎপন্ন হয় বলেই অন্ধকারে মোম জ্বালালে আমরা এর আশেপাশের জিনিস দেখতে পাই। মোম একটি রাসায়নিক কচু। একে পোড়ালে এতে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে তাপশক্তি ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। একইভাবে গ্যাসের চুলার গ্যাস জ্বালালেও গ্যাসে সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তি পরিবর্তিত হয়ে প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে। উৎপন্ন তাপশক্তি দিয়েই আমরা রান্নাবান্নার কাজ করি।
তাহলে আমরা দেখলাম যে, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে।
কাজ : খাবার সোডা ও লেবুর রসের বিক্রিয়া প্রয়োজনীয় উপকরণ : খাবার সোডা বা বেকিং সোডা, টেস্টটিউব, লেবুর রস, ড্রপার পদ্ধতি : টেস্টটিউবে কিছু খাবার সোডা নাও। ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে লেবুর রস টেস্টটিউবে যোগ করো। কী দেখতে : পাচ্ছ? গ্যাসের বুদবুদ উঠছে? হ্যাঁ, প্রচুর গ্যাসের বুদবুদ উঠছে। টেস্টটিউবের তলায় স্পর্শ করে দেখ হাতে ঠান্ডা লাগে কি? |
লেবুর রসে থাকে প্রচুর সাইট্রিক এসিড যা বেকিং সোডার সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সাইট্রেট, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও পানি তৈরি করে। আমরা যে বুদবুদ দেখি তা কার্বন ডাইঅক্সাইড ছাড়া আর কিছুই নয়।
টেস্টটিউব স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা লাগার কারণ কী ? কারণ হলো এই বিক্রিয়ায় তাপশক্তি হ্রাস পায়। তা না হলে ঠাণ্ডা লাগত না।
এখন তোমরা বেকিং সোডার সাথে লেবুর রসের বদলে ভিনেগার বা এসিটিক এসিড যোগ করে দেখ কী ঘটে?
কাজ : চুন ও ভিনেগারের রাসায়নিক বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ উপকরণ : চুন, ভিনেগার, বিকার, হাতমোজা, ড্রপার পদ্ধতি : হাতমোজা পরে কিছু চুন বিকারে নাও। এবার এতে ড্রপার দিয়ে আস্তে আস্তে ভিনেগার যোগ করো। বিকারটি হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখ। গরম লাগছে? কারণ কী? এখানে চুনের সাথে ভিনেগারের বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম এসিটেট ও পানি তৈরি হচ্ছে আর প্রচুর তাপশক্তিও উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপন্ন তাপের কারণেই বিকার স্পর্শ করলে গরম লাগছে। |
এখানে চুন হলো ক্ষারীয় পদার্থ ও এসিটিক এসিড হলো অম্লধর্মী পদার্থ আর উৎপাদিত ক্যালসিয়াম এসিটেট হলো নিরপেক্ষ পদার্থ। এ জাতীয় বিক্রিয়ায় যেখানে বিপরীতধর্মী পদার্থ একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে নিরপেক্ষ পদার্থ তৈরি করে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া (Neutralization reaction) বলে।
এখন তোমরা চুনে ভিনেগারের বদলে লেবুর রস দিয়ে দেখ কী ধরনের বিক্রিয়া ঘটে?
কাজ : চুনের সাথে পানির বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় উপকরণ : চুন, পানি, বিকার, হাতমোজা, স্পেচুলা, ড্রপার পদ্ধতি : ৫ গ্রাম (ভিন্ন পরিমাণও নেওয়া যেতে পারে) চুন বিকারে নাও। ড্রপার দিয়ে ৪০ গ্রাম পানি আস্তে আস্তে যোগ কর। হাতমোজা পরে বিকার স্পর্শ করো। পানি যোগ করার পর কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছ? |
বিকার অনেক বেশি গরম হয়ে যাচ্ছে আর বিকারের মিশ্রণটি পানি ফুটানোর সময় যে রকম টগবগ করে অনেকটা সেরকম করছে। এখানে চুনে পানি যোগ করার ফলে, চুন ও পানির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়।
উৎপন্ন স্ন্যাক লাইম নামেই বেশি পরিচিত। এই বিক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় যার ফলে পানি ফুটতে থাকে। স্ন্যাক লাইম বা পানিতে খুব অল্প পরিমাণে দ্রবীভূত হয়। আর পানিতে এর সম্পৃক্ত দ্রবণকেই চুনের পানি বা লাইম ওয়াটার বলা হয়৷
উপরের পরীক্ষাতে তোমরা যে সাসপেনসনটি পেলে তা কিছুক্ষণ রেখে দাও। উপরে পরিষ্কার পানির মতো যে অংশটি দেখা যাচ্ছে সেটিই কিন্তু চুনের পানি।
আমরা টর্চ লাইট, বিভিন্ন রকম রিমোট কন্ট্রোলার, নানা রকম খেলনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে ব্যাটারি ব্যবহার করি এগুলোকে ড্রাইসেল বা শুষ্ক কোষ বলে।
তোমরা কি জানো, এই শুষ্ক কোষ কীভাবে তৈরি করা হয়?
প্রথমে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH4Cl), কয়লার গুঁড়া এবং ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড (MnO2) ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ পানি যোগ করে একটি পেস্ট বা লেই তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণটি সিলিন্ডার আকৃতির দস্তার চোঙে নিয়ে তার মধ্যে একটি কার্বন দণ্ড এমনভাবে বসানো হয় যাতে দণ্ডটি দস্তার চোঙকে স্পর্শ না করে। কার্বন দণ্ডের মাথায় একটি ধাতব টুপি পরানো থাকে। শুষ্ক কোষের উপরের অংশ কার্বন দণ্ডটির চারপাশ পিচের আস্তরণ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। দস্তার চোঙটিকে একটি শক্ত কাগজ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় । এখানে দস্তার চোঙ ঋণাত্মক তড়িৎদ্বার বা অ্যানোড হিসেবে কাজ করে আর ধাতব টুপি দিয়ে ঢাকা কার্বন দণ্ডের উপরিভাগ ধনাত্মক তড়িৎদ্বার বা ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে। এখন আমরা দেখে নিই কীভাবে শুষ্ক কোষ কাজ করে।
কাজ : শুষ্ক কোষ দিয়ে তড়িৎ বর্তনী তৈরি করে শক্তির রূপান্তর দেখা পদ্ধতি : ১টি তামার তারের এক প্রাপ্ত শুষ্ক কোষের অ্যানোড ও অপর তামার তারটি ক্যাথোডের সাথে যুক্ত করো। এবার প্রয়োজনীয় উপকরণ : ১টি বৈদ্যুতিক বাল্ব, ১টি শুল্ক কোষ, ২টি তামার তার চিত্রের মতো করে বৈদ্যুতিক বাঘের সাথে তার দুটি সংযোগ দাও। বাল্বটি জ্বলে উঠল। কারণ হলো এখানে তামার তারের মাধ্যমে বাল্ব ও কোষের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরি হয়ে গেল। |
এখানে কী ধরনের শক্তির রূপান্তর ঘটল? বর্তনী তৈরি হওয়ার ফলে বাল্ব জ্বলছে এবং তা আলোক শক্তি দিচ্ছে। এই আলোক শক্তি হচ্ছে কোষের রাসায়নিক শক্তির একটি রূপ। আর কোষের শক্তির উৎস হলো এখানে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ অর্থাৎ দস্তা, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড, কয়লার গুঁড়া ও ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড। তাহলে বলা যায় যে, ঐ সকল রাসায়নিক পদার্থের সঞ্চিত শক্তিই রূপান্তরিত হয়ে আলোক শক্তি উৎপন্ন করছে। অর্থাৎ এখানে রাসায়নিক শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis)
কাজ : তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানা প্রয়োজনীয় উপকরণ : ব্যাটারি, তামার তার (দুটি), দুটি জিংক দণ্ড (তড়িৎদ্বার), পানি, লবণ, একটি কাচ পাত্র জিংক তড়িৎদ্বার পদ্ধতি : কাচ পাত্রে ৩০০ মিলিলিটার পানি নিয়ে ৩০ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ যোগ করে ভালোভাবে নাড়া দাও। এবার জিংক দণ্ড দুটি চিত্র অনুযায়ী তামার তার দিয়ে ব্যাটারির সাথে সংযুক্ত করো। জিংক দণ্ডের দিকে ভালো করে লক্ষ করো। উভয় দণ্ডের গায়ে গ্যাসের বুদবুদ দেখতে পাচ্ছ কি |
হ্যাঁ, এর কারণ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক সোডিয়াম আয়ন (Nat) ও ঋণাত্মক ক্লোরাইড আয়ন (CI) উৎপন্ন হয়।
একইভাবে দ্রবণে পানি বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন ও হাইড্রোক্সিল আয়ন উৎপন্ন করে।
ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিয়ে দ্রবীভূত লবণের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোক্সিল আয়ন ও ক্লোরাইড আয়ন অ্যানোডের দিকে অগ্রসর হয়। ক্লোরাইড আয়ন () অ্যানোডে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরিন গ্যাস () উৎপন্ন করে। তাই আমরা অ্যানোডে গ্যাসের বুদবুদ দেখতে পাই। অন্যদিকে সোডিয়াম আয়ন ও হাইড্রোজেন আয়ন ক্যাথোডের দিকে অগ্রসর হয়। বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোজেন আয়ন () ক্যাথোডে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন গ্যাস () উৎপন্ন করে যার ফলে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ দেখা যায় ও দ্রবণে সোডিয়াম আয়ন () ও হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH) থেকে যায়।
সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণের মধ্যদিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে অ্যানোডে ক্লোরিন গ্যাস, ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং দ্রবণে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড থেকে যায়।
যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে অন্য পদার্থে পরিণত হয় তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য (Electrolyte) বলে। সব পদার্থ তড়িৎ প্রবাহের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না। যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে না ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়াও করে না, তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। যেমন- চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি।
নতুন শব্দ : যোজনী, যৌগমূলক, সংযোজন, দহন, প্রতিস্থাপন, প্রশমন, অ্যানোড, ক্যাথোড, তড়িৎ বিশ্লেষণ, তড়িৎ বিশ্লেষ্য, স্ন্যাক লাইম
এই অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম
- সংযোজন বিক্রিয়ায় একের অধিক পদার্থ একত্রিত হয়ে একটি নতুন পদার্থ তৈরি করে।
- দহন বিক্রিয়ায় একটি পদার্থ বাতাসের অক্সিজেনের সাহায্যে পুড়ে প্রচুর তাপশক্তি ও আলোক শক্তি উৎপন্ন করে।
- প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় একটি মৌল কোনো যৌগ থেকে অপর একটি মৌলকে প্রতিস্থাপিত করে নতুন পদার্থ তৈরি করে ।
- যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ ভেঙে একের অধিক নতুন পদার্থে পরিণত হয় তাকে বিযোজন বিক্রিয়া বলে।
- প্রশমন বিক্রিয়ায় বিপরীতধর্মী পদার্থ বিক্রিয়া করে একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে নিরপেক্ষ পদার্থ উৎপন্ন করে। দহন বিক্রিয়ায় সাধারণত রাসায়নিক শক্তি তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তির রূপান্তর ঘটে।
- শুষ্ক কোষ ব্যবহার করলে রাসায়নিক শক্তি রূপান্তরিত হয়ে আলোক শক্তি বা অন্য কোনো শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
- যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে তাদেরকে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। -
- যে সমস্ত পদার্থ দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিবহন করে না তাদেরকে তড়িৎ অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে।
- মৌলের যোজনীর সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।
- রাসায়নিক সমীকরণে পদার্থগুলো সমীকরণটির তীর চিহ্নের বামদিকে এবং বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলো তীর চিহ্নের ডানদিকে হবে।
Read more